চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এমনটি জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নির্বাচনের ব্যাপারে আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এজন্য নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আমি আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের জন্য ব্যাপক উৎসাহ এবং উদ্দীপনায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করবে।”
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, “গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের এক বিশাল উৎসব চলছে। দেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একের পর এক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। অভিনব পদ্ধতিতে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যেমন একটি ছবির সঙ্গে অন্য ছবি জুড়ে দেওয়া, ঘটনা বিকৃত করে অন্য দেশের ঘটনা আমাদের দেশের ঘটনা হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া। যতই নির্বাচন কাছে আসবে, গুজবের রূপ আরও ভয়ংকর হতে থাকবে। এর পেছনে কারা আছেন, কেন এসব হচ্ছে, তা সবারই জানা আছে।”
তিনি জানান, “আমরা জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছি, এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”
ড. ইউনূস বলেন, “দেশবাসীকে আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, জুলাই মাসে অভ্যুত্থানের প্রথম পর্ব সফলভাবে শেষ হয়েছে, এবং এর মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা এখনও যুদ্ধাবস্থায় আছি। ‘গুজব’ হলো এই জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পরাজিত শক্তির অন্যতম বড় হাতিয়ার। গুজব ছড়িয়ে পড়লে, এর উৎস খুঁজে বের করতে হবে। গুজবকে অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এটি একটি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ঐক্য পলাতক শক্তির মধ্যে ভয় সৃষ্টি করেছে। তারা আমাদের ঐক্য ভাঙতে চায়। তাদের অভিনব কৌশল খুব সাবধানে কার্যকর হচ্ছে, আপনি বুঝতেও পারছেন না কখন আপনি তাদের খেলায় পুতুল হয়ে গেছেন। আমাদের সচেতনতা এবং ঐক্য দিয়েই আমরা এই গুজব প্রতিরোধ করতে পারব এবং পলাতক অপশক্তির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে সক্ষম হব।”
প্রধান উপদেষ্টা জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ শুরু করেছে এবং ৬টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশসহ ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়েছে, এবং তারা সংস্কার কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছেন।
তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের মতামত সংগ্রহ করা হচ্ছে, এবং যে বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, তা চিহ্নিত করা হবে। সেই তালিকায় স্বাক্ষর নেয়া হবে, এবং এটি হবে জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদ।”