বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর এবারের বর্ধিত সভা দলটির নেতাকর্মীদের মতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। গতকাল, ২৭ ফেব্রুয়ারি, জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলের মাঠে অনুষ্ঠিত এই সভায় নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্রীয় এবং মাঠ পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন। সভাটি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত এই দিনব্যাপী বর্ধিত সভায় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যুগপৎ এক দফা আন্দোলন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করা হয়েছে।
সভায় মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচার-বিরোধী দীর্ঘ ১৬ বছরের আন্দোলনের মধ্যে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান ও তার বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। একই সঙ্গে আহত, পঙ্গু, দৃষ্টিহীন ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং চিকিৎসার দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অযাচিত সরকার বিচারের নামে প্রহসন করে মিথ্যা অভিযোগে নেতাকর্মীদের কারাবন্দি করছে। কারাগারে বন্দি অবস্থায়ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রধান প্রেরণা হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। সেই কারণে দলের নেতাকর্মীরা তার দ্রুত সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন।
বর্ধিত সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের মধ্যে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর, দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দলকে শক্তিশালী করে আন্দোলনকে বেগবান করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এছাড়া, বিএনপির পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন ২০৩০ এবং ২০২৩ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের রূপরেখা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব দল ও সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার দাবি জানানো হয়।
সভায় জনগণের স্বার্থে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে গুম, খুন, গায়েবি মামলা এবং অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করা হয় এবং ১/১১ সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
সবশেষে, বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য প্রস্তুত থাকতে এবং দলীয় নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানায়।