গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ক্ষমতা ছাড়ার আগে তিনি আন্দোলন দমাতে একাধিক চেষ্টা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ছিল তার কঠোর নির্দেশনা। এসব নির্দেশনা প্রকাশ্যেই দেওয়া হয়েছিল, তবে আন্দোলন থামানো সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত, শত শত মানুষের প্রাণহানির পর দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর একে একে বেরিয়ে আসছে তার আন্দোলন দমনের নানা অপতৎপরতার চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশেষত, তিনি আন্দোলনকারীদের ওপর বলপ্রয়োগের নির্দেশ দেন, এমনকি গুলি চালানোর নির্দেশও দেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে হত্যা ও নির্বিচার গুলির একাধিক বড় অভিযান ছিল শেখ হাসিনার নির্দেশনায়।
শেখ হাসিনার দেওয়া নির্দেশের অডিও কল রেকর্ড নিয়মিতভাবে ফাঁস হচ্ছে। এসব অডিওতে দলীয় নেতাকর্মীদের আন্দোলন দমাতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এক নতুন অডিও রেকর্ড প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে আন্দোলন দমাতে “প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার ও হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশনা” পাওয়া গেছে।
এই অডিওটি প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংস্থা ‘গার্ডিয়ান কাউন্সিল’। তারা ৭ মার্চ দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে এটি তাদের ফেসবুক পেইজে শেয়ার করে। অডিওটি বর্তমানে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল।
বিশিষ্ট লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য প্রথম এই অডিওটি সামনে আনেন। ২৮ জানুয়ারি, তার ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি জানান, “আকাশের হেলিকপ্টার থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে বিক্ষোভকারীদের গুলি করার শেখ হাসিনার নিজস্ব নির্দেশ এখন আমাদের হাতে।”
ফাঁস হওয়া অডিওটি ১৯ জুলাইয়ের, যখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তুমুল আন্দোলন চলছিল। ওইদিনই আন্দোলন দমনে কারফিউ জারি করা হয়।
অডিওতে শোনা যায়, শেখ হাসিনা একটি উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিচ্ছেন, “র্যাব-ডিজিএফআইসহ সবাইকে গুলি করে মেরে ফেল,” এবং “যেখানে জমায়েত দেখা যাবে, সেখানেই হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হবে।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আন্দোলন দমনে একাধিক বড় অভিযান ছিল শেখ হাসিনার নির্দেশনায়। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা বা নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেছিল।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক ঘটনা ঘটে, যেখানে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়। পুলিশ এবং র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১১,৭০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়, যেখানে বলা হয়, সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের দমনের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
শেষমেশ, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দুপুরে ভারতে পালিয়ে যান। তিনি এখন সাত মাস ধরে ভারতে অবস্থান করছেন এবং তার কোনো ছবি বা ভিডিও প্রকাশ্যে আসেনি।
এদিকে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২০০টিরও বেশি মামলা হয়েছে, এবং তদন্ত দ্রুত গতিতে চলমান রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া আগামী এপ্রিল মাসে শুরু হতে পারে।