আলী রীয়াজের সতর্কবার্তা: ফেব্রুয়ারির নির্বাচন স্থগিত হলে হুমকিতে পড়বে জাতীয় নিরাপত্তা

আলী রীয়াজের সতর্কবার্তা: ফেব্রুয়ারির নির্বাচন স্থগিত হলে হুমকিতে পড়বে জাতীয় নিরাপত্তা

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন না হলে দেশে শুধু অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতাই নয়, জাতীয় নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তবে তার মতে, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে নির্বাচনের মাধ্যমেও বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না।

শনিবার বিকেলে প্রথম আলোর কার্যালয়ে আয়োজিত ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোকে বারবার আহ্বান জানিয়েছি। তারা সাড়া দিয়েছেনও। তবে এই প্রক্রিয়া চিরস্থায়ী হতে পারে না। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের আয়োজন করতেই হবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে কেবল অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, জাতীয় নিরাপত্তার ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকাঠামোয় মৌলিক পরিবর্তন আসুক। কিন্তু যদি পরিবর্তন সীমিত থাকে, তাহলে নির্বাচন শেষে কেবল একজন বিজয়ী এবং একটি দল ক্ষমতায় যাবে, এর বাইরে খুব বেশি কিছু ঘটবে না। আমরা চাই একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র। তিন দফা চেষ্টা (১৯৭৩, ১৯৯১ ও ২০০৯) করেও সেটি অর্জন করা যায়নি।”

কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

আলী রীয়াজ মনে করেন, গত ১৬ বছরের রাজনৈতিক সংকট শুধু সময়সীমার নয়, এর পেছনে কাঠামোগত দুর্বলতাও কাজ করেছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এ সংকট তীব্র হয়েছে। তাই এবার কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো জরুরি।

তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি কাঠামোগত পরিবর্তন নিশ্চিত না হয়, তাহলে পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমেও মৌলিক কোনো অগ্রগতি হবে না।”

ঐকমত্য কমিশনের অগ্রগতি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ শুরু হয় এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। এতে দেশের ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, পুলিশ, জনপ্রশাসনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

আলী রীয়াজ জানান, এ পর্যন্ত ৮৪টি বিষয়ের মধ্যে ৬৪টিতে ঐকমত্য হয়েছে। বাকি ২০টির মধ্যে ১১টি চূড়ান্ত হয়েছে, তবে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে মতভিন্নতা এখনো রয়ে গেছে।

সংবিধান প্রসঙ্গে মত

তিনি বলেন, “আমরা এখনো সংবিধানের ভেতরেই আছি, কারণ বর্তমান সরকার অনুচ্ছেদ ১০৬ অনুযায়ী গঠিত হয়েছে। কিন্তু যদি পুরোপুরি সংবিধানের ভেতরেই থাকতাম, তাহলে এই আলোচনা কিংবা কমিশনের প্রয়োজন হতো না।”

সামনে পথ খোঁজার আহ্বান

রাজনৈতিক দলগুলো ছয়টি সম্ভাব্য পথ দেখিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। বিশেষজ্ঞরা দুটি পথ প্রস্তাব করেছেন। সংবিধানের বাইরে যে পরিবর্তনগুলো দরকার, সেগুলোতে দ্বিমত নেই। তবে সংবিধানসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেই মূল মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা আরেকটি শেখ হাসিনার শাসন চাই না। জনগণের মৌলিক আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্যই কাঠামোগত সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য এখনই রাজনৈতিক সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে হবে।”

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মতিউর রহমান আকন্দ, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *