শার্ম-আল-শেখে বিশ্বনেতাদের হাসি-আড্ডার মাঝেই গাজায় শান্তির কোনও দিন নেই — যুদ্ধবিরতির আগএ নয়, শপথের পরও নয়। সমুদ্রতীরের রিসোর্টে ব্যাপক কূটনৈতিক দৃশ্যের ঠিক বিপরীতে বন্দি মুক্তি, ত্রাণ শিথিলতা ও সামান্য স্থিরতার মুহূর্তগুলোও গাজায় নিষ্পলক সহিংসতার ভয় ও ভাঙচুর থামাতে পারেনি। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক শান্তিচর্চার সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিক লাবনা মাসারোয়াউয়া সম্প্রতি এই চিত্রই তুলে ধরেছেন ব্রিটিশ সংবাদমाध্যম মিডল ইস্ট আই-তে প্রকাশিত নিবন্ধে।
লেখায় বলা হয়েছে — শার্ম-আল-শেখে স্বাগত ও কুশল বিনিময়ের সেই মুহূর্তে ইসরায়েলি হামলা থেমে থেমে চলছিল; যেন গাজায় শ্বাস নেওয়ারও খেয়াল নেই। যুদ্ধবিরতির ঠিক পরের দিনও ১০৪ জনেরও বেশি বেসামরিক জন নিহত হন; তাদের মধ্যে ৪৬ জন শিশু এবং একই পরিবারের ১৮ জন সদস্য রয়েছেন। অনেক নিহত বেসামরিকের নামও জানা যায়নি — তারা নিঃশব্দে, বেনামে শহীদ হয়েছেন।
নিবন্ধে আরও এ কথা উঠে এসেছে যে, পশ্চিমা মিডিয়া ও রাজনীতিতে বন্দি ইস্যুতে মানবিক বোধ প্রকাশিত হলেও গাজার শহীদ শিশুদের জন্য তেমন সমব্যথা চোখে পড়ে না। ইসরায়েলি টেলিভিশনে বন্দিদের পরিবারগুলোর আবেগবহুল মুহূর্ত ইউনানন্দে প্রচারিত হচ্ছিল—তবু গাজার নিহত বালক-বালিকাদের ব্যথার ছবি, নাম বা গল্প বিশ্বোচিত সহানুভূতি জাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে — মুক্তিকৃত এক বন্দি হাইসাম সালেম তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের মরদেহ হাসপাতালে দেখে চিৎকার করে বলেছিলেন, “আমার বাচ্চারা বেঁচে আছে কি? না… তারা মারা গেছে।” এমন ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি বিশ্বমঞ্চে তেমনভাবে প্রতিধ্বনিত হয়নি, লেখক অভিযোগ করেছেন।
লেখায় দাবি করা হয়েছে, ইসরাইল ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ বলে বললেও বাস্তবে গাজা বা পশ্চিম তীরের নিরপরাধ জনসাধারণকে রক্ষা করার দায়িত্ব আন্তর্জাতিকভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে না। সংঘবদ্ধ হামলা ও সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি হওয়া মুহূর্তগুলোতেও ত্রাণ পৌঁছানো ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা দেখা গেছে।
শার্ম-আল-শেখ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার লক্ষ্য পুরনোর পথ হিসেবে কেবল আলোচনা-সমঝোতার মতো বিকল্প তুলে ধরলেও ইসরায়েল बारবার চুক্তি অমান্য করেছে—লেখক এ মন্তব্য রেখেছেন। ফলে বহু পর্যায়ে যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিকে কার্যতই ‘নির্দিষ্ট মডেল’ আকারে বিন্যস্ত করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন, যেখানে ফিলিস্তিনিদের বলবার বা প্রতিরোধের সুযোগ ক্রমশই খর্বিত হচ্ছে।
নিবন্ধে সতর্ক করা হয়েছে — যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভীরু বা অমনোযোগী থাকে, তাহলে “যখন ইচ্ছে ইসরায়েল চাইলেই ফিলিস্তিনিদের হত্যা করবে; আর তারা বলতেও পারবে না”—এমন এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা রচিত হতে পারে। লেখক বিশ্ব নেতাদের সম্মিলিত দৃষ্টি আকর্ষণের আবেদন জানাচ্ছেন, যেন মানবিকতা, ত্রাণ ও স্থায়ী শান্তির প্রতি সত্যিকারের দায়িত্ব নেওয়া হয়।
সংক্ষিপ্তভাবে—শার্ম-আল-শেখের কূটনৈতিক হাসিমুখের বহরে ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-অবস্থান যেন অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে; নগণ্য সংখ্যার মৃত্যুই বিশ্বের নড়েচড়ে বসার জন্য যথেষ্ট প্রভাব ফেলছে না—এই উদ্বেগটাই মূলভাব হিসেবে লাবনা মাসারোয়াউয়ার নিবন্ধে উঠে এসেছে।

