গাজায় চলা ইসরায়েলি সামরিক অভিযান চলাকালীন ইসরায়েলের নিজস্ব সামরিক আইনজীবীরা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠতে পারে এমন প্রমাণ থাকার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এই তথ্য ২০২৩ সালে সংগ্রহ করেছিল। রয়টার্সের প্রতিবেদনে সাবেক পাঁচ মার্কিন কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তাদের মতে, গোয়েন্দা তথ্যটি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছানো সবচেয়ে উদ্বেগজনক রিপোর্টগুলোর মধ্যে একটি ছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে অভিযান পরিচালনার বৈধতা নিয়ে সন্দেহ ছিল, যা সরকারের প্রকাশ্য অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তবে প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট কোনো যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ উল্লেখ করা হয়নি।
গাজায় দু’বছরের সামরিক অভিযানে ইসরায়েলি হামলায় ৬৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ২০ হাজারকে ইসরায়েল যোদ্ধা বলে দাবি করেছে। সাবেক কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে—যদি ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত হয়, তাহলে মার্কিন আইন অনুযায়ী অস্ত্র সরবরাহ ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সরাসরি প্রমাণ নেই যে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক বা মানবিক কর্মীদের হত্যা করছে। ফলে অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়া যায়।
রয়টার্স জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আইনজীবীরা আগেই সচিব অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে সতর্ক করেছিলেন যে ইসরায়েলের অভিযান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করতে পারে এবং তা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি। ২০২৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করেছে হতে পারে, কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করেনি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এবং সম্ভাব্য ২,০০০ ঘটনার তদন্ত চলছে। মার্কিন ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বাইডেন প্রশাসন প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রতি নীরব অবস্থান নিয়েছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্ভাব্য প্রশ্রয় দিয়েছে।

