ঘুমের ঘোরেই লিপিকা জিজ্ঞাসা করেন, ‘কে শব্দ করছে?’, তখন তাঁকে হত্যা করা হয়

ঘুমের ঘোরেই লিপিকা জিজ্ঞাসা করেন, ‘কে শব্দ করছে?’, তখন তাঁকে হত্যা করা হয়

বাসায় চুরি করতে গিয়ে দুই চোর নটর ডেম কলেজের স্টাফ লিপিকা গোমেজকে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তারের পর পিবিআই জানিয়েছে, দুই চোর লিপিকার বাসায় চুরি করতে গিয়েছিলেন। এ সময় বাসায় কিছু একটা শব্দ পেয়ে ঘুমের ঘোরেই লিপিকা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘কে শব্দ করছে?’ এতে ভয় পেয়ে দুই চোরের একজন তাঁর মাথায় লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করেন, অন্যজন বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরেন। এতেই লিপিকার মৃত্যু হয়।

পিবিআই বলছে, যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা হলেন জুয়েল রানা (২১) ও নজরুল (২২)। গতকাল রোববার ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ১০ সেপ্টেম্বর সূত্রাপুরের ৭৫ নম্বর ঋষিকেশ দাস রোডের চতুর্থ তলায় ভাড়া বাসায় খুন হয়েছিলেন লিপিকা।

লিপিকা হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ সোমবার দুপুরে পিবিআইয়ের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-পশ্চিমাঞ্চল) সায়েদুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, নটর ডেম কলেজে অফিস সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন লিপিকা। প্রায় ১৮ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় লিপিকার। তাঁর কোনো সন্তান নেই। সূত্রাপুরের বাসায় তিনি একাই থাকতেন। এই বিষয় জেনেই দুই চোর তাঁর বাসায় চুরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

গ্রেপ্তার জুয়েল রানা চুরির মূল পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে পিবিআই বলছে, একটি মেসে খাবার খেতে গিয়ে সাত থেকে আট বছর আগে জুয়েল রানা ও নজরুলের বন্ধুত্ব হয়। জুয়েল রানা চুরির পরিকল্পনা করে নজরুলকে জানান, তিনি (জুয়েল রানা) যে ভবনে থাকেন, সেটির পাশের ভবনের চারতলায় একজন নারী একা বসবাস করেন। ওই বাসায় চুরি করলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে।

পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-পশ্চিমাঞ্চল) সায়েদুর রহমান বলেন, পরিকল্পনার পর জুয়েল রানা তাঁর স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ঘটনার দিন (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে নজরুলকে সঙ্গে নিয়ে জুয়েল বাসায় আসেন। দিবাগত রাত একটার দিকে নজরুল ছাদ থেকে একটি রশিতে ঝুলে লিপিকার বাসার পেছনের দিকে ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করেন। তারপর নজরুল বাসার মূল দরজা খুলে ছাদে গিয়ে জুয়েল রানাকে ডেকে আনেন। চুরি করার সময় লিপিকা ঘুমের ঘোরেই শব্দ করেন। এ সময় নজরুল একটি লোহার পাইপ দিয়ে লিপিকার মাথায় আঘাত করেন। জুয়েল রানা বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরেন। এতেই লিপিকা মারা যান। তাঁরা লিপিকার দুটি মুঠোফোন, হাত ব্যাগ নিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে জুয়েল রানার বাসায় চলে যান। সেখানে দুজনে হাত ব্যাগে থাকা ২৬ হাজার ৩৫০ টাকা ভাগ করে নেন। ভোরে নজরুল বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসায় চলে যান। মুঠোফোন দুটি সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।

পিবিআই সূত্র জানায়, ঘটনার দিন লিপিকা গোমেজ কর্মস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি বিকেলে বাসায় ফেরেন। পরদিন সকালে লিপিকা গোমেজ কর্মস্থলে যাননি। নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও লিপিকার খবর সংগ্রহের জন্য দুজন স্টাফকে তাঁর বাসায় পাঠান। দুজন স্টাফ ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককে নিয়ে বেলা একটার দিকে ফ্ল্যাটে গিয়ে খাটের ওপর লিপিকার লাশ দেখতে পান। বিষয়টি জানার পর লিপিকার মামাতো ভাই প্রিন্স গোমেজ বাসায় আসেন। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হলে লিপিকার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় লিপিকার মামাতো ভাই প্রিন্স গোমেজ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানার মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে দুই চোরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *