বাংলাদেশে আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকটি ব্যাংককের সাংগ্রিলা হোটেলে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে, স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার এই বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ, ভারতে বসে তার আক্রমণাত্মক মন্তব্য এবং এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন।”
এছাড়া, সীমান্ত হত্যা, গঙ্গা চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়েও আলোচনা হয়েছে, জানান শফিকুল আলম।
বাংলাদেশ এবং ভারতের গণমাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে এই বৈঠক নিয়ে আলোচনা চলছিল। বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে এই বৈঠকটি করার জন্য বাংলাদেশ পক্ষ থেকে আগ্রহ প্রকাশ করে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেননি, যার কারণে বৈঠকটি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল।
শুক্রবার, থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং তার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। এছাড়া, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিপীড়নের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে ভারতের গণমাধ্যমে উঠে আসার কারণে সম্পর্কের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে, তবে এই ইস্যুতে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট নয় বলে বাংলাদেশ অভিযোগ করেছে। শেখ হাসিনার ভারতে বসে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া নিয়েও ঢাকা বারবার আপত্তি জানিয়েছে, এবং এ বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে।
এছাড়া, গত জুলাই থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসা দেওয়া প্রায় বন্ধ রয়েছে, এবং সীমান্ত হত্যা বিষয়টি এখনও বিরাজমান। সম্প্রতি, অধ্যাপক ইউনূসের চীন সফরের সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য সম্পর্কে মন্তব্য করার কারণে সম্পর্কের টানাপোড়েন আরো বেড়ে গেছে। তিনি ওই অঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে “ল্যান্ডলকড” বা ভূ-বেষ্টিত বলে উল্লেখ করেন, যা ভারতের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এ সমস্ত বিষয়গুলোর প্রেক্ষাপটে, ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ড. ইউনূস এবং নরেন্দ্র মোদির এই বৈঠকটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
আগের বছর সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে ড. ইউনূস ও মোদীর মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সফরের সময়সূচির ভিন্নতার কারণে তা হয়নি। ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন, এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন একাধিকবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।