নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস ডি. ওয়াটসন মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি, যেখানে তিনি বহু দশক ধরে কাজ করেছেন।
ওয়াটসন ১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে মিলিয়ে ডিএনএ-এর দ্বি-সর্পিল গঠন আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কার আণবিক জীববিজ্ঞানে যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটায় এবং ২০ শতকের অন্যতম বড় বৈজ্ঞানিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৬২ সালে তিনি মরিস উইলকিনস ও ক্রিকের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান।
তবে ওয়াটসনের জীবন বিতর্কময় দিকও ছিল। জাতি ও বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তার সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছিলেন যে, কিছু জাতির গড় আইকিউয়ের পার্থক্য জিন বা জেনেটিক উপাদানের কারণে। এসব মন্তব্যের কারণে তিনি কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির চ্যান্সেলর পদ হারান এবং পরবর্তীতে একাধিক সম্মানসূচক পদবিও বাতিল করা হয়। ল্যাবরেটরি জানায়, “ড. ওয়াটসনের মন্তব্য নিন্দনীয় এবং বিজ্ঞানে কোনো ভিত্তি নেই।”
ওয়াটসনের জন্ম ১৯২৮ সালের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে। কৈশোরে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির মাধ্যমে পরমাণুর অভ্যন্তরীণ গঠন বোঝার নতুন কৌশলে আগ্রহী হন। পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে পরিচিত হন এবং ডিএনএ মডেল তৈরিতে যুক্ত হন।
ডিএনএ আবিষ্কারের পর ওয়াটসন নিউ ইয়র্কে তার স্ত্রী এলিজাবেথ হার্ভার্ডের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন এবং জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির দায়িত্ব নেন এবং প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বের শীর্ষ বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
ওয়াটসন ও তার স্ত্রী দুই ছেলের মধ্যে একজনকে সিজোফ্রেনিয়ার সঙ্গে লড়তে দেখা গেছে। ২০১৪ সালে বৈজ্ঞানিক জীবনের প্রতি বিতর্কিত মন্তব্য ও ব্যক্তিগত কারণে তিনি তার নোবেল স্বর্ণপদক নিলামে বিক্রি করেন, যা পরে একজন রুশ ধনকুবেরের মাধ্যমে ফেরত আসে।
জেমস ওয়াটসনের জীবন ও গবেষণা বিজ্ঞানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার ডিএনএ আবিষ্কার আধুনিক জীববিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানকে নতুন দিশা দেখিয়েছে।

