গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউব গাজায় ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণসম্বলিত ৭ শতাধিক ভিডিও মুছে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্টারসেপ্ট’-এর বুধবার (৫ নভেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ভিডিও ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-কে সরবরাহ করেছিল।
ইউটিউব জানিয়েছে, ভিডিওগুলো মুছে দেওয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে যে, এই সংস্থাগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তিনটি ফিলিস্তিনি সংস্থা—আল-হক্ক, আল-মিজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ও প্যালেস্টাইনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস—এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, কারণ তারা ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে আইসিসির সঙ্গে সহযোগিতা করছে।
অক্টোবরে এই ভিডিওগুলো সরিয়ে নেওয়ায় গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি নৃশংসতার বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষিত প্রমাণগুলো হারিয়ে গেছে। মুছে ফেলা ভিডিওতে ছিল ঘরবাড়ি ধ্বংস, সাধারণ মানুষ হত্যার দৃশ্য এবং নির্যাতনের সাক্ষ্য। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফিলিস্তিনি–আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যার তদন্তমূলক ফুটেজ এবং ‘দ্য বিচ’ প্রামাণ্যচিত্রও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, ইউটিউবের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা সহজ করছে, যা ইসরায়েলের অপরাধের প্রমাণ গোপন রাখার লক্ষ্য নিয়ে। ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ-এর পরিচালক সারা লিয়া হুইটসন বলেন, “কোনও সংগঠন এই তথ্য শেয়ার করায় নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করবে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন।”
আল-হক্ক, আল-মিজান ও প্যালেস্টাইনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ইউটিউবের পদক্ষেপকে মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য ‘ভয়ংকর পশ্চাৎপদতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং অভিযোগ করেছে, গুগল ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকারদের কণ্ঠরোধের ষড়যন্ত্রে অংশ নিচ্ছে।
‘দ্য ইন্টারসেপ্ট’ জানায়, ইউটিউবের আচরণ পক্ষপাতদুষ্ট; প্রো-ইসরায়েল ভিডিওগুলো অক্ষত থাকলেও ফিলিস্তিনি তথ্য নিয়মিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। এই সময়ে আইসিসি গাজার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এদিকে, ২৮ অক্টোবর উইকিপিডিয়ায় ‘গাজা গণহত্যা’ শিরোনামের পেজটি লক করার পর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস এটিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ উল্লেখ করে নিরপেক্ষ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে এই পদক্ষেপকে সম্পাদকেরা রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার হিসেবে দেখেছেন।

