বন্ধুর ফোন পেয়ে পাওনা টাকা নিতে বের হয়েছিলেন নিহত শাহাদাত

বন্ধুর ফোন পেয়ে পাওনা টাকা নিতে বের হয়েছিলেন নিহত শাহাদাত

সাগর নামে শাহাদাতের পুরোনো এক বন্ধু আছে। তাঁকে কিছু টাকা ধার দিয়েছিলেন শাহাদাত। সেদিন সাগরের ফোন পেয়ে পাওনা টাকা নেওয়ার জন্যই দুপুরে বের হয়েছিলেন শাহাদাত। এর পর থেকে মুঠোফোন বন্ধ। পরদিন ফেসবুকে তাঁর লাশ উদ্ধারের ভিডিও দেখে জানতে পারেন শাহাদাত মারা গেছেন।

চট্টগ্রামে একদল তরুণের হাতে গণপিটুনিতে নিহত শাহাদাত হোসেনের (২৪) স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন কথাগুলো। আজ সোমবার প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় তাঁর। শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই সময় স্বামীকে হারালাম। আমার স্বামীকে যাঁরা মারল, আমি তাঁদের বিচার চাই।’

শাহাদাত হোসেনের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠতে পারেননি শারমিন আক্তার। গত শনিবার শাহাদাতকে পিটিয়ে মারার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শাহাদাতকে উড়ালসড়কের নিচে দুটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। এ সময় গান গেয়ে তাঁকে মারধর করছেন একদল তরুণ। ভিডিওটিতে মারধরের শিকার ব্যক্তি যে শাহাদাত, সেটি শনিবার রাতে পুলিশকে নিশ্চিত করেছেন শারমিন আক্তার। শাহাদাত ছিলেন ফলমণ্ডি এলাকার ভ্যানচালক।

শারমিন আক্তার বলেন, ‘সেদিন দুপুরে সাগরের ফোন পেয়েই বাসা থেকে বের হয়েছিলেন শাহাদাত। সাগর আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। আমি বর্তমানে স্বামীর বাসায় থাকছি না।’

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সাগর আছেন কি না, এমন প্রশ্নে শারমিন সরাসরি জবাব দিতে রাজি হননি। তবে সাগর ওই স্থানের আশপাশে প্রায়ই থাকতেন বলে জানান তিনি।

মো. শাহাদাত হোসেনের পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানাধীন পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামে। স্ত্রী ও মাকে নিয়ে থাকতেন নগরের কোতোয়ালি থানাধীন বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে। সেখানে সবাই নিশ্চিত করেছেন ভিডিওতে মারধরের শিকার ব্যক্তি শাহাদাত। তবে বর্তমানে তাঁর স্ত্রী সেখানে থাকেন না।

সোমবার সরেজমিনে বয়লার কলোনিতে দেখা যায়, সেখানে এক কক্ষের একটি ঘরের দরজায় বসে ছিলেন দেলোয়ারা বেগম। দেলোয়ারা বেগমও বলেন, সেদিন তাঁর বন্ধুর ফোন পেয়ে বের হয়েছিলেন শাহাদাত। পরদিন তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। যে বন্ধুর ফোন এসেছিল, সেটি সাগর বলে নিশ্চিত করেছেন দেলোয়ারা বেগম। তবে সাগরের বিস্তারিত পরিচয় সম্পর্কে জানাতে পারেননি তিনি।

পুলিশ জানায়, মারধরের ঘটনাটি গত ১৩ আগস্ট সন্ধ্যা কিংবা ১৪ আগস্ট রাতের। তবে লাশ ১৪ তারিখ উদ্ধার হওয়ায় পুলিশের ধারণা ১৪ আগস্ট এটি ঘটেছে। সেদিন শাহাদাতের স্ত্রী ও চাচা মো. হারুন হাসপাতালে তাঁর লাশ শনাক্ত করেন।

লাশ উদ্ধারের পরদিন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করেন মো. হারুন। সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, শাহাদাত হোসেনের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে গান গেয়ে গেয়ে তাঁকে লাঠি হাতে মারধর করতে দেখা গেছে কয়েকজন তরুণ-যুবককে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে স্থানে শাহাদাতকে বেঁধে রাখা হয়েছিল, সেটি চট্টগ্রাম নগরের আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কের নিচে ২ নম্বর গেট মোড় এলাকা।

ভিডিও থেকে কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছে নগর পুলিশ। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, এক যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *