২০১০ সালের এক ম্যাচে সান্তোস কোচ দরিভাল জুনিয়রের সিদ্ধান্তে বদলি হয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন কিশোর নেইমার। ১৮ বছরের সেই প্রতিভাবান ফুটবলারকে ঘিরে তখন পুরো ব্রাজিল মাতোয়ারা ছিল। ১৫ বছর পর একই দৃশ্য। এবার ৩৩ বছর বয়সী নেইমারকে বদলি করতেই সান্তোস কোচ ভয়ভোদার ওপর চোটপাট তাঁর। কিন্তু এরপরও প্রশ্ন উঠছে—নেইমার কি লড়ছেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে, নাকি নিজের বয়সের সঙ্গে?
মারাকানায় ফ্ল্যামেঙ্গোর বিপক্ষে সান্তোস পিছিয়ে ৩–০ গোলে। ৮৫ মিনিটে তাঁকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়—দলের সেরা তারকাকেও কোচ ভরসা করছেন না। নেইমার মাঠ ছাড়তেই সান্তোস দুই গোল করে। ম্যাচে সতীর্থদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্যও বিতর্ক বাড়িয়েছে—“ফাইনাল থার্ডে আমাকে বেশি খুঁজতে হবে, এটাই গোলের পথ।”
এতে স্পষ্ট, নেইমারের গতিময়তা কিংবা ধার আর আগের মতো নেই। গোলের বোঝা এখন সতীর্থদের কাঁধেও তুলতে চাইছেন তিনি। ব্রাজিলজুড়ে তাই নেইমারের আচরণ ও পারফরম্যান্স নিয়ে তুমুল সমালোচনা। সাংবাদিক জুকা কাফুরি পর্যন্ত বলেছেন, “আমার ৫৫ বছরের ক্যারিয়ারে নেইমার প্রতিভার সবচেয়ে বড় অপচয়।”
জাতীয় দল? ফিটনেস নয়, আস্থাও বড় প্রশ্ন
ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমারের সর্বশেষ ম্যাচ ২০২৩ সালের অক্টোবরে। দুই বছরের বেশি সময় তিনি জাতীয় দলে অনুপস্থিত। এর মধ্যে নিয়মিত খেলতে না পারা, বারবার চোট আর মাঠের বাইরের বিতর্ক তাঁর ক্যারিয়ারে ‘ট্রেডমার্ক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বকাপের আর সাত মাসও নেই। কোচ কার্লো আনচেলত্তি সুযোগ রাখলেও শর্ত স্পষ্ট—“পূর্ণ ফিট হতে হবে।” এজন্য কেবল শারীরিক ফিটনেস নয়, খেলায় ধার ফেরানোও জরুরি। কিন্তু সান্তোসের সাম্প্রতিক ম্যাচ বলছে—সেই ফর্ম এখনো বহু দূরে।
এরই মধ্যে এস্তেভাও-ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগো-রাফিনিয়াদের দারুণভাবে প্রস্তুত করেছেন আনচেলত্তি। ফলে নেইমারকে জায়গা দিতে হলে নতুন পজিশনে খাপ খাওয়ানো লাগবে। একজন মাঝবয়সী, দীর্ঘদিন অনিয়মিত খেলোয়াড়কে বিশ্বকাপে এমন ঝুঁকি নিয়ে খেলাবেন—এটা আনচেলত্তির ধরনে পড়ে না।
পূর্বসূরি তারকাদের দৃষ্টান্তই ভয় ধরায়
৩৩ বছর বয়সে রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনিও—কেউই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পাননি, পিক ফর্মেও নয়। তুলনায় নেইমারের এই মৌসুমে পরিসংখ্যান—২৪ ম্যাচে ৬ গোল ও ৩ অ্যাসিস্ট। তাঁর ক্লাব সান্তোসও অবনমনের শঙ্কায়।
তাহলে কাগজে-কলমে ব্রাজিল দলে তাঁর জায়গা কোথায়?
ভক্তদের বিশ্বাস আছে, বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে
ফরাসি মনোবিদ জ্যাক লাকাঁর ব্যাখ্যায়, ভক্তদের অবচেতন বাসনাই নেইমারকে বিশ্বকাপে দেখার আশা জিইয়ে রাখে। কারণ, তাঁকে নিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের যত প্রত্যাশা ছিল, তার বেশিরভাগই পূরণ হয়নি। তাই ২০২৬-এ তিনি অসাধারণ কিছু করবেন—এটাই ভক্তদের চাওয়া।
কিন্তু মাঠে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। বাস্তবতা বলছে—নেইমারকে দলে নিলে ব্রাজিল ড্রেসিংরুমের ‘বেমানান হাতি’ হিসেবেই অনেকের চোখে দেখাবে।
শেষ কথা
আবেগ দিয়ে দেখলে নেইমারের জায়গা আছে।
কিন্তু বাস্তব চোখে দেখলে—২০২৬ বিশ্বকাপ তাঁকে টিভিতেই দেখতে হতে পারে!

