৬৭ শতাংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিতে, সেনাবাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব

৬৭ শতাংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিতে, সেনাবাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব

দেশজুড়ে নির্বাচনী নিরাপত্তা উদ্বেগ: ৬৭ শতাংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, সেনাবাহিনী চাইল বিচারিক ক্ষমতা ও ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে বাড়ছে নিরাপত্তা উদ্বেগ। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) জানিয়েছে, মোট ভোটকেন্দ্রের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সর্বশেষ বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উঠে এসেছে সহিংসতা, কেন্দ্র দখল ও গুজব ছড়ানোর আশঙ্কা। এমন প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা ও ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে।

দেশজুড়ে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৮ হাজার ৬৬৩টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর মধ্যে ৮ হাজার ২২৬টিকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এসবি—যা মোট কেন্দ্রের প্রায় ৬৭ শতাংশ।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে এসব তথ্য উপস্থাপন করে এসবি। রোববার (১০ নভেম্বর) বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হয়।

বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা জানান, নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই ও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিরা বলেন, বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হলে বাহিনী আরও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। পাশাপাশি নির্বাচনী সামগ্রী ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাদের কেন্দ্র প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

এ ছাড়া ড্রোন ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ এবং অস্ত্রধারী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে সেনাবাহিনী। তাদের মতে, ভোটের আগে-পরে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর হামলা, কেন্দ্র দখল, ভোটগ্রহণে বাধা বা অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা থাকায় বাহিনীগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় অপরিহার্য।

বর্তমানে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ আইনের আওতায় সেনাবাহিনী ৬২ জেলায় মোতায়েন রয়েছে। বাহিনী প্রস্তাব করেছে, নির্বাচনের আগে তিন দিন, ভোটের দিন ও পরের চার দিন—মোট আট দিন সেনা সদস্যদের মাঠে রাখার।

এসবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচনের সময় অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহ বাড়তে পারে। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রভাব বিস্তারে অবৈধ অর্থের প্রবাহ রোধে সিআইডিকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সিআইডি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা ইতোমধ্যেই শনাক্ত করা হয়েছে; র‍্যাবের সাইবার ইউনিট এ বিষয়ে কাজ করছে।

বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, “অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। কমিশনের একার পক্ষে এই বিশাল দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়—সবার সমন্বিত সহযোগিতাই সাফল্যের চাবিকাঠি।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনে নানা চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা আসবে, তবে আন্তরিকতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।”

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *