বাংলাদেশি তরুণ ভাড়াটে রুশ সেনা হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে গিয়ে নিহত

বাংলাদেশি তরুণ ভাড়াটে রুশ সেনা হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে গিয়ে নিহত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভাড়াটে সেনাসদস্য হিসেবে অংশ নিয়ে নিহত হয়েছেন বাংলাদেশি এক তরুণ। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের মরিচালি গ্রামের মৃত সত্তর মিয়ার ছোট ছেলে ইয়াসিন শেখ।

বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) রাত পৌনে ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ঘটনাটি জানার পর খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি ছুটি থাকার কারণে অফিসিয়ালি পদক্ষেপ গ্রহণে কিছুটা সময় লাগবে। তবুও মৌখিকভাবে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

গত ২৭ মার্চ ইয়াসিন নিহত হলেও ঈদের পরদিন রাশিয়ায় থাকা তার বন্ধু মেহেদীর মাধ্যমে পরিবার এ খবর নিশ্চিত হয়। এরপর থেকেই ইয়াসিনের পরিবারে শোকের মাতম চলছে।

জানা গেছে, গত বছর বিদেশে গিয়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেন ইয়াসিন। ২৭ মার্চ যুদ্ধের সময় হঠাৎ মিসাইল হামলায় ইয়াসিনসহ তার চার সহযোদ্ধার মৃত্যু ঘটে।

ইয়াসিন শেখের চার ভাই-বোনের মধ্যে দুজন আগেই মারা গেছেন। মা আর বড় ভাইকে নিয়ে ছিল তার সংসার। বড় ভাই ব্যবসায়ী রুহুল আমিনই তার পড়াশোনা ও বিদেশ যাত্রার খরচ বহন করতেন।

রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণের ছবি ও ভিডিও নিয়মিত ফেসবুকে পোস্ট করতেন ইয়াসিন। গত ১ মার্চ, বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে রাশিয়া যাওয়া, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া এবং তার স্বপ্নপূরণ নিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেছিলেন তিনি।

ইয়াসিন ভিডিওতে বলেন, গত বছর জানুয়ারিতে রাশিয়ায় একটি চাইনিজ কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করেন। পরের সেপ্টেম্বর মাসে অফার লেটার পেয়ে রাশিয়া চলে যান। সেখানে তিন মাস কাজ করার পর রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। তিনি জানান, যদিও দেশে সৈনিক হতে পারেননি, তবে বিদেশে সৈনিক হয়ে তিনি বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচারণ ও তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার সাহস অর্জন করেন বলে জানান ইয়াসিন। যুদ্ধে মৃত্যু হলেও তার কোনো আফসোস থাকবে না বলেও তিনি ভিডিওতে উল্লেখ করেন। তবে, সেই ভিডিওটি পোস্ট করার মাস না পেরোতেই ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় নিহত হন ইয়াসিন।

ইয়াসিনের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম রবি জানান, রাশিয়ায় যাওয়ার জন্য ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে রাশিয়ান ভাষা শিখেছিলেন ইয়াসিন। পরে বন্ধুর সহায়তায় রাশিয়ায় একটি কোম্পানিতে ভালো চাকরি পান। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিলে তার জীবন বদলে যায়।

তিনি বলেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সময় ইয়াসিনের মা ও বড় ভাইকে ঢাকায় নিয়ে তাদের সাক্ষর গ্রহণ করে রাশিয়া প্রেরণকারী এজেন্সির লোকজন। ২৬ মার্চ ইয়াসিন তার মায়ের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা বলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই ১০ লাখ টাকা পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

ইয়াসিনের মরদেহের বর্তমান অবস্থা কিংবা তা দেশে আনা যাবে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাচ্ছে না পরিবার। এ অবস্থায় ছেলের ছবি নিয়ে মায়ের কান্না থামছেই না। পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, এবং পুরো এলাকা শোকসন্তপ্ত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *