রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বর ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। সাধারণত বৃষ্টির মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে এবং নভেম্বরের পর আক্রান্তের সংখ্যা কমে যায়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, ডেঙ্গু এখন সারা বছরই মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা জানান, ২০২৪ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এর পেছনে দায়ী প্রশাসনের কার্যক্রমে ত্রুটি এবং জনসচেতনতার অভাব। পরিত্যক্ত পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করছে, যা ডেঙ্গুর প্রধান কারণ।
চিকিত্সকরা জানান, জ্বর দেখা দিলে এনএস-১ এবং সিবিসি পরীক্ষা করা জরুরি। এই পরীক্ষা গ্রামাঞ্চলে সহজলভ্য নয়, যেখানে বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। জ্বর কমে যাওয়ায় রোগীরা সুস্থ বোধ করতে পারেন, কিন্তু ভাইরাস তখন নীরবে শক্তি সঞ্চয় করে। পরে প্রচণ্ড জ্বর, শরীর ব্যথা ও রক্তক্ষরণসহ জটিলতা দেখা দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৭৫,৯২৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৩০৭ জন মারা গেছেন। যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সিটি করপোরেশন দায়ী নয়। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। এডিস মশা দুই ধরনের—এডিস এলবোপিকটাস (জঙ্গলে) এবং এডিস ইজিপটাই (শহরে)। শহর ও গ্রামে মশার ঘনত্ব ও বিস্তার বাড়ছে, যার কারণে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
আইইডিসিআর-এর জরিপে দেখা গেছে, বরগুনা পৌরসভায় এডিস এলবোপিকটাসের ঘনত্ব ৪৭.১০, সদর উপজেলায় ১৬৩.৪; যেখানে ২০-এর বেশি মান হলে ভয়াবহ পরিস্থিতি ধরা হয়। মশা নির্মূল ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, জ্বর দেখা দিলে প্যারাসিটামল খাবেন এবং দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেবেন। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঢাকার সরকারি হাসপাতাল ও বিভাগীয় হাসপাতালগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। হাসপাতালের সীমিত জনবল পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বিত স্থায়ী কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে মশা নিধন, জনসচেতনতা এবং চিকিত্সা কার্যক্রম নিয়মিত ও কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে পারে। ডেঙ্গুর এই অব্যাহত প্রকোপ রোধ করতে সতর্কতা, ব্যবস্থা এবং সমন্বিত কার্যক্রম জরুরি।

