গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্তে উঠে এসেছে, উভয় পক্ষ—এনসিপি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থক—দুই পক্ষই দায়ী। আদালত-নির্ধারিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উসকানি, গুজব এবং দুই পক্ষের অনড় অবস্থান ও প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।
সরকার গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠিত হয় ঘটনার কারণ, দায়ী পক্ষ ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানোর সুপারিশ নির্ধারণের জন্য। কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী জানান, তদন্তে ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কিন্তু কার গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন, তা কমিশনের কার্যপরিধির মধ্যে ছিল না।
সংঘর্ষের মূল কারণ হিসেবে কমিশন উল্লেখ করেছে—সমাবেশের নাম পরিবর্তন, স্থানীয়দের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, “মুজিববাদ মুর্দাবাদ” স্লোগান ও রাজনৈতিক উত্তেজনা। এই পরিস্থিতি স্থানীয় জনগণকে সংঘাতে প্ররোচিত করে।
কমিশন ৮-১০টি সুপারিশ এবং ভবিষ্যতের জন্য পাঁচটি করণীয় প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—
- রাজনৈতিক কর্মসূচি ১৫ দিন আগে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া।
- উসকানি, ভুল তথ্য ও বিতর্কিত মন্তব্য এড়িয়ে চলা।
- স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা।
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনো সংঘর্ষের সময় দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখবে।
- নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, “ঘটনার মূল দায় চিহ্নিতদের ওপর এসেছে। ভবিষ্যতে এমন সংঘাত এড়াতে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।”
তদন্তে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ প্রতিরোধে প্রশাসনের দ্রুত সমন্বয় ও শক্তিশালী গোয়েন্দা তৎপরতা থাকা উচিত ছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগ’ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্রতিবেদনটি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে, তবে এখনও জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। কমিশন মনে করছে, সরকার চাইলে প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রকাশ করে স্বচ্ছতা ও জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করতে পারে।

