বরিশালের কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে অর্ধেক ভাড়া–সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের পর পুরো জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শনিবার রাতের সহিংসতার পর আজ রোববার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব রুটে বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
শনিবার রাতের ঘটনায় টার্মিনালে শ’খানেক বাস ভাঙচুর করা হয়। হামলা চালানো হয় কাউন্টার ও টার্মিনাল ভবনেও। একটি বাসে আগুন লাগানো হলেও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষ মিলিয়ে অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন।
পরিবহনশ্রমিকেরা অভিযোগ করেছেন, হামলার সময় ৩০ থেকে ৪০টি কাউন্টার থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা লুট হয়েছে এবং তাঁদের ২০–২৫ শ্রমিক আহত হয়েছেন। মালিকেদের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ তিন থেকে চার কোটি টাকা।
অন্যদিকে বিএম কলেজের কয়েক শিক্ষার্থী জানান, অর্ধেক ভাড়া ব্যবহারের নিয়ম থাকা সত্ত্বেও মুলাদী থেকে ফেরার পথে শ্রমিকেরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও লাঞ্ছনা করেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা টার্মিনালে গিয়ে শ্রমিকদের বিচারের দাবি জানালে তাঁদের ওপর পুনরায় হামলা হয় বলে অভিযোগ করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁদের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনার বিচার দাবিতে কলেজে মানববন্ধন করেন তাঁরা।
সকাল থেকে টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় সারি সারি ভাঙা বাস। মালিক সমিতির দাবি, তাদের ১৯০ বাসের প্রায় সবই ক্ষতিগ্রস্ত। মেরামত ছাড়া কোনো বাসই রাস্তায় নামানো সম্ভব নয়।
সব রুটে বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে যাচ্ছেন, অনেকে বাস না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
রাজশাহীমুখী যাত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘টার্মিনালে এসে জানতে পারলাম বাস চলছে না। অথচ জরুরি কাজে যেতে হবে—এখন কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না।’
ঢাকাগামী আল আমিন জানান, বাস না পেয়ে অতিরিক্ত খরচে গাড়ি বদলিয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা কোনো ধর্মঘট ডাকিনি। টার্মিনালে একটি বাসও অক্ষত নেই, তাই চলাচল সম্ভব হয়নি।’ দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না থাকলে বাইরের জেলার মালিকেরাও বাস চালাবেন না, এটা স্বাভাবিক।’

