পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে। মাত্র চার মাস সাত দিনের মাথায় সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলাটির বিচারকাজ পলাতক আসামি হিসেবেই শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের অনুপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুইটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে উভয়ের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে এই রায় মামলার শেষ ধাপ নয়। আইনে আরও দুইটি পরবর্তী বিচারিক ধাপের সুযোগ রয়েছে।
আপিল করার আইনি পথ
২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনের পর ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে এখন যে কেউ আপিল বিভাগে আপিল করতে পারেন—অভিযুক্ত, রাষ্ট্রপক্ষ কিংবা অভিযোগকারী।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী:
- ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন
- সরকার বা অভিযোগকারী পক্ষও দণ্ড হালকা হলে বা অভিযুক্ত খালাস পেলে আপিল করতে পারবে
কিন্তু পলাতক আসামিদের ক্ষেত্রে শর্ত
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম জানান, যেহেতু শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক, তাই আপিলের অধিকার পেতে হলে তাদের আগে:
- আত্মসমর্পণ করতে হবে, অথবা
- গ্রেফতার হতে হবে
এই শর্ত পূরণ না হলে তারা আপিল করতে পারবেন না।
আপিলের সময়সীমা ও প্রক্রিয়া
আইন অনুযায়ী:
- রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে
- আপিল দাখিলের পর ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে
- আপিল বিভাগ চাইলে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল, পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারে
- আইনজীবীরা আপিলে বিচার প্রক্রিয়ার অসঙ্গতি, ত্রুটি বা প্রমাণ নিরীক্ষার সুযোগ পাবেন
২০১৩ সালে কাদের মোল্লার মামলার পর আইন সংশোধিত হওয়ায় এ সুযোগ তৈরি হয়। সেই সময় জনগণের দাবির মুখে আইন পরিবর্তন করে আপিলের ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছিল।

