‘শেখ হাসিনা ইস্যু’—বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কতটা প্রভাব ফেলবে?

‘শেখ হাসিনা ইস্যু’—বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কতটা প্রভাব ফেলবে?

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর দুই দেশের সম্পর্ক কোন পথে এগোবে—তা নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে।

আগামী তিন মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘শেখ হাসিনা ইস্যু’ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কি না—সেদিকেও নজর রাখছেন বিশ্লেষকরা।

গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেকটাই শীতল। এমন প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় পরিস্থিতিকে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছে।

প্রত্যর্পণ ইস্যুতে দুই দেশের অবস্থান

রায় ঘোষণার পরই বাংলাদেশ সরকার জানায়, তারা ভারতকে ‘নোট ভেরবাল’ পাঠিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একই আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে।

ভারত অবশ্য এখনো কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান নেয়নি। নিউ দিল্লি শুধু জানিয়েছে—তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছে।

এর আগে ভারত জানিয়েছিল, ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার স্বার্থে’ শেখ হাসিনাকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের বৈঠকে এই ইস্যু উঠেছে কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, মৃত্যুদণ্ডের রায় ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে। কারণ মৃত্যু-ঝুঁকির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দেশগুলো সাধারণত প্রত্যর্পণে অনাগ্রহ দেখায়। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে ভারত সহযোগী হবে—এমন সম্ভাবনা খুবই কম।

নতুন সরকারের ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে কি না—তা নির্ভর করবে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা নতুন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। পাশাপাশি ভারত সেই সরকারের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়, তাও হবে গুরুত্বপূর্ণ।

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবিরের মতে, তিনটি বিষয় বিশেষভাবে রিলেশনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে—
১) বাংলাদেশের নতুন সরকারের চরিত্র ও কূটনৈতিক কৌশল
২) ভারত সরকারের অগ্রাধিকার
৩) শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভূমিকা

তার ভাষায়—‘শেখ হাসিনা ইস্যুকে একপাশে রেখে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা যেতে পারে। আবার এটিকে সামনে রেখেও দুই দেশ পদক্ষেপ নিতে পারে।’

দ্বিপাক্ষিক চ্যালেঞ্জ আরও বাড়াচ্ছে অতীত উত্তেজনা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক গত এক বছরে নানা কারণে উত্তেজনাপূর্ণ হয়েছে।

  • শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে টানাপোড়েন
  • বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসা সীমাবদ্ধতা
  • আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা ও পতাকা পোড়ানোর ঘটনা
  • কিছু রাজনৈতিক নেতার ভারতবিরোধী মন্তব্য
  • পাকিস্তানের সঙ্গে ঢাকা–নিউ দিল্লির তুলনামূলক উষ্ণ সম্পর্ক

এ সবকিছু ভারতের দৃষ্টিতে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

ভারতীয় বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্তের মতে, মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রত্যর্পণকে কার্যত অসম্ভব করে তুলেছে। তার ভাষায়—‘মৃত্যু-ঝুঁকি থাকলে ভারত কাউকে কখনোই প্রত্যর্পণ করবে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সম্পর্কের উন্নতি খুবই কঠিন।’

নির্বাচনের পরও থাকবে শেখ হাসিনা ইস্যু

অনেকের মতে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পরও শেখ হাসিনা ইস্যু দুই দেশের সম্পর্কের কেন্দ্রে থাকবে। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করেন—সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইলে দুই দেশকেই অন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

শ্রীরাধা দত্ত বলেন—‘এই একটি ইস্যুকে সামনে রেখে এগোনো যাবে না। দুই দেশ চাইলে এটি পাশ কাটিয়ে যৌথভাবে কাজ করলে সম্পর্ক এগোতে পারে।’

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *