টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পুরো পুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টেকনাফ থেকে কোনো নৌযান সেন্টমার্টিনে যেতে পারছে না। সেখান থেকে আসতেও পারছে না। নৌযান দেখলেই মিয়ানমার থেকে ছুটে আসে গুলি। সাত দিন ধরে চলছে এমন পরিস্থিতি। পরপর তিন দফা গুলির ঘটনার পর এমন অবস্থায় সেন্টমার্টিনের ১০ হাজারের মতো অধিবাসী খাদ্য ও নিত্যপণ্য নিয়ে সংকটে পড়েছেন। তাদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
টেকনাফে আটকা পড়েছেন প্রায় চার শতাধিক বাসিন্দা। আর কয়েকদিন পরেই আসছে ঈদুল আজহা। এটি দ্রুত সমাধান না হলে বড় ধরনের অভাব দেখা দিতে পারে এই দ্বীপে। শুধু তাই নয়, যদি কোনো রোগব্যাধি হয়, তাহলে বিনা চিকিৎসায়ই দ্বীপেই মৃত্যুবরণ করতে হবে বাসিন্দাদের।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ফলে সেন্টমার্টিনেও দেখা দিচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সংকট। দ্বীপে বসবাসরত দশ হাজার বাসিন্দার মধ্যে যারা দিনে এনে দিনে খায় বেশি সমস্যায় পড়েছেন তারাই। খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল করতে না পারায় সেন্টমার্টিনের দোকানগুলোতে যেমন মজুত করা খাদ্যপণ্য শেষ হতে চলেছে, তেমনি সেই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বারিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত সমাধান না হলে দ্বীপবাসী খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সমস্যায় পরতে পারেন বলে ধারণা স্থানীয়দের।
গত ১১ জুন টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে সাগরের ঘোলচর এলাকায় একটি স্পিডবোটকে নৌযান নিয়ে ধাওয়া করে গুলি করা হয়। মিয়ানমারের সৈন্যরাই গুলি চালিয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কোনো বক্তব্য ও পাওয়া যায়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইংয়ের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির বলেছেন, ‘প্রথম যেদিন এই ঘটনা ঘটে, সেদিনই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। ১১ জুনের ঘটনার পর কূটনৈতিক চ্যানেলে আবারও প্রতিবাদ জানাবো বলে জানান। তবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে না, সেটা তো আমরা বুঝতেই পারছি। ওই এলাকা এখন কাদের নিয়ন্ত্রণে সেটিও পরিষ্কার নয় এখন। তবে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে।’
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা সাবেক মেম্বার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে অতিরিক্ত খাদ্য রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিনই টেকনাফ থেকে ট্রলারে করে নানা ধরনের নিত্যপণ্য আসে। কিন্তু সাত দিন হলো কিছুই আসছে না। এখন সেন্টমার্টিনে কাঁচামাল কিছুই নেই। চাল-ডাল দিয়ে কোনোভাবে দিন চলছে। আবার যা আছে, তার দামও ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ-তিনগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে আমরা অনেক কষ্টে আছি। এভাবে আর দুই-একদিন হয়ত চলা যাবে। এরপর আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আমরা প্রশাসনকে বারবার ব্যবস্থা নিতে বলছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। গত ৫ জুন টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে ফেরার পথে নির্বাচন কর্মকর্তা ও ৮ জুন সেন্টমার্টিনে ইট-বালু ও খাদ্যসামগ্রী বহনের ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ মঙ্গলবার আবারও গুলি চালানো হয়’।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি এখনও সুরাহা না হওয়ায় দ্বীপে খাদ্যপণ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এটি দ্রুত সমাধান না হলে বড় ধরনের অভাব দেখা দিতে পারে দ্বীপে। শুধু তাই নয়, আমাদের যদি কোনো রোগব্যাধি হয়, তাহলে বিনাচিকিৎসায় আমাদের এখানে মৃত্যুবরণ করতে হবে। এই পরিস্থিতি তো দিনের পর দিন চলতে পারে না। আমি নিজে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বিকালে হেলিকপ্টার যোগে বিজিবি মহাপরিচালক সেন্টমার্টিন দ্বীপে এসেছিলেন। কিন্ত এ ব্যাপারে কী ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে পারিনি’।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে স্পিডবোট ও ট্রলারে গুলির ঘটনায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আপৎকালীন রুট হিসেবে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমে জেটি ঘাট চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে নৌযান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ৯ জুন কক্সবাজারের ডিসি অফিসেও বৈঠক হয়েছে। আমরা নৌযান মালিকদের ডেকে বলেছি, বিকল্প রুট দিয়ে আপাতত খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে।’